জলবায়ু:গাজর প্রধানত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফসল। গাজর শীতল আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। কিছুটা গরম আবহাওয়াও সহ্য করতে পারে। ফসল উৎপাদনের উপযোগী তাপমাত্রা হলো ১০° থেকে ২৫° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গাজর চাষে শুকনো পরিবেশ প্রয়োজন। চারা কচি থাকা অবস্থায় বৃষ্টিপাত ক্ষতিকর।
মাটি:পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন বেলে দোঁআশ ও দোআঁশ মাটি গাজর চাষের জন্য উপযোগী।
গাজরের জাত:সাধারনত বিদেশ থেকে বিভিন্ন জাতের গাজরের বীজ আমদানি করে চাষ করা হয়। যেমন-রয়েল ক্রস, কোরেল ক্রস, কিনকো সানটিনে রয়েল ও স্কারলেট নান্টেস। এছাড়াও আরও আছে পুষা কেশর, কুরোদা-৩৫, নিউ কোয়ারজা, সানটিনি, ইয়োলো রকেট ইত্যাদি জাতগুলো কৃষকদের নিকট জনপ্রিয়। এসব জাতের মধ্যে পুষা কেশর আমাদের দেশের জলবায়ুতে বীজ উৎপাদনে সক্ষম।
বীজ বপনের সময়:গাজরের বীজ অক্টোবরের শেষ ভাগ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে। নভেম্বর মাস গাজরের বীজ বোনার সবচেয়ে উপযোগী সময়। ভালো মানের বীজ ৮৫-৯০% অঙ্কুরোদগমন হয়।
জমি তৈরি:গাজরের বীজ অতি ক্ষুদ্র বলে জমি কমপক্ষে ৫-৬ টি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি বিশেষভাবে মিহি করে জমি তৈরি করা উচিত।
বীজহার:শতক প্রতি ২০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন।
সার ব্যবস্থাপনা:গাজর চাষের জন্য প্রতি শতক জমির জন্য
গোবর ৪০ কেজি
ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম
টিএসপি ৭০০ গ্রাম
এমওপি (পটাশ) ৮০০ গ্রাম
জিপসাম ৪০০ গ্রাম
জিংক (দস্তা) ৪০ গ্রাম
সবটুকু গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক (আলাদাভাবে) সার এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি সার বীজ বোনার পূর্বে জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সার চারার বয়স ৩০ থেকে ৪০ দিন হলে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বপন দূরত্ব:গাজর সারি পদ্ধতিতে বপন করা ভালো।
সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। চারা থেকে চারা ৭-৮ সেমি: ৬ সারি পর পর পরিচর্যার জন্য ৪০ সেন্টিমিটার জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে । গাছ পাতলা করার পর গাছ থেকে গাছের দূরত্ব রাখতে হবে ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার।
বীজ ভিজানো:বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। এতে বীজ তাড়াতাড়ি গজাবে।
বীজহার:সারি পদ্ধতিতে বীজ বপন করলে প্রতি শতকে বীজ লাগবে ২০ গ্রাম। বীজ খুব ছোট বলে ছাই বা মাটি মিশিয়ে বীজ বপন করা ভালো। বীজ যেন বেশি নিচে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সেচ:বীজ বোনার পর হালকা সেচ দিলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। পরে মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে মাটিতে ১৫ থেকে ২০ দিন অন্তর সেচ দেয়া যেতে পারে। সেচের পানির অভাবে বা নিয়মিত পানি না দিলে অনেক সময় গাজর লম্বালম্বিভাবে ফেটে যায়।
পানি নিষ্কাশন:জমি থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়ার জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অর্থাৎ জমিতে এমনভাবে সেচ দিতে হবে যাতে মাটি কখনো বেশি শুকিয়ে না যায় অথবা জমি সব সময় যাতে ভিজা না থাকে।
আগাছা দমন:বীজ গজানোর পর প্রয়োজনে মাঝে মাঝে চারা পাতলা করে দিতে হবে। নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা রাখতে হবে। নিড়ানি দিয়ে জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
ফসল তোলা:বীজ বপনের ৭০ থেকে ৮০ দিনে গাজর উত্তোলন করা যায়।
ফলন:শতক প্রতি জাত ভেদে ৬০-৮০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।