কৃষি প্রতিনিধি: আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে অধিক ফলন ও মানসম্পন্ন ফল পাওয়া সম্ভব। নিচে আধুনিক পদ্ধতিতে পেপে চাষের ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:
১. মাটি নির্বাচন:
পেপে চাষের জন্য ভাল জলনিকাশযুক্ত, উর্বর, বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটির pH মাত্রা ৬-৭ হওয়া উচিত। মাটি পরীক্ষা করে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
২. জাত নির্বাচন:
আধুনিক চাষের জন্য হাইব্রিড জাত বেছে নেওয়া উচিত, যেমন 'রেড লেডি', 'পিusa ডোয়ার্ফ', 'কোয়ামার' ইত্যাদি। এই জাতগুলোতে দ্রুত ফলন পাওয়া যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো।
৩. বীজ বপন:
* বীজ বপনের জন্য একক গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের গভীরতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। প্রতিটি গর্তে ২-৩টি বীজ রাখতে হবে, যাতে যদি কোনো একটি না গজায়, অন্যটি গজায়। ২-৩ সপ্তাহ পর যখন চারা গজাবে, তখন সবল চারাটি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলা হবে।
পলি ব্যাগে চারা তৈরি
পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৪ ইঞ্চি . আকারের ব্যাগে সমান পরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করুন। তারপর সদ্য তোলা বীজ হলে রৌদ্রোজ্জ্বল, সহজে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এরকম উর্বর জমি বীজতলার জন্য বেছে নিতে হবে ।
৪. চারা রোপণ:
বীজতলায় বীজ বপনের ৪-৫ সপ্তাহ পর চারা যখন ১৫-২০ সেমি লম্বা হয়, তখন মূল জমিতে স্থানান্তর করা হয়। গাছের মধ্যে ২.৫-৩ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে।
৫. সেচ ব্যবস্থা:
পেপে গাছ নিয়মিত সেচ প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে প্রতি সপ্তাহে এবং শীতকালে ১৫ দিনে একবার সেচ দেওয়া উচিত। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য মালচিং করা যেতে পারে।
৬. সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম ও সারের পরিমাপ
ইউরিয়া ৪০০-৫০০ গ্রাম
টিএসপি ৫০০ গ্রাম
এমওপি ৪৫০-৫০০ গ্রাম
জিপসাম ২৫০ গ্রাম
জিংক ২০ গ্রাম
বোরন ২০ গ্রাম
সার প্রয়োগের পদ্ধতিঃ চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে প্রতি গর্তে ১৫ কেজি গোবর সার,টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও বোরিক এসিড দিতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা রোপনের ১ মাস পর থেকে প্রতি মাসে একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া গাছে প্রতি ৫০ গ্রাম ও এমওপি ৫০ গ্রাম। গাছে ফুল এলে এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। ফল তোলার ২ মাস আগে সার দেয়া বন্ধ করতে হবে।
৭. পোকা মাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা
পোকামাকড়ঃ
পেঁপের মিলিবাগ/ছাতরা পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
পেঁপের সাদা মাছি পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোগবালাইঃ
পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমনে অতিরিক্ত পানি বের করার ব্যবস্থা করুন। গোড়ায় ছাই ছিটিয়ে রাখতে পারেন।লাগানোর প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন: এমকজিম অথবা ৪ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে বীজ শোধন করে নিন।
পেঁপের গোড়া পচা রোগ দমনের জন্য কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে অথবা প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/ ১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ।
পেঁপের শুটি মোল্ড দমনের জন্য মিলিবাগ পোকা দমন করতে হবে । মিলিবাগের আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার ( ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে )১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
পাতায় হলদে মোজাইক ও পাতা কোকড়ানো রোগের বাহক পোকা (জাবপোকা) দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
পেঁপের উইল্টিং রোগের রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ১% বর্দোমিকচার বা কুপ্রাভিট ৪ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন। আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে জিপসাম অথবা চুন প্রয়োগ করুন।
৮. ফল সংগ্রহ:
বীজ বপনের ৬-৮ মাস পর ফলন শুরু হয়। ফলের ত্বক যখন হালকা হলুদ রঙ ধারন করে, তখন ফল সংগ্রহ করা যায়।
৯. সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা:
ফল সংগ্রহের পর ফলগুলোকে পরিষ্কার করে বাছাই করতে হবে। সংরক্ষণের জন্য ফলগুলোকে ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাত করা যেতে পারে।